কিশোরগঞ্জের হাওরে দেখা মিলছে না দেশি প্রজাতির মাছের
আশরাফুল ইসলাম তুষার, চিফ রিপোর্টার।।
প্রকাশিত:
বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
২১৫
বার পড়া হয়েছে
কিশোরগঞ্জের হাওর বেষ্টিত ইটনা, মিঠামইন, নিকলী ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় দেখা মিলছে না দেশী প্রজাতির মাছের। চলতি বর্ষা মৌসুমেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। নদী ভরাট, ইঞ্জিনচালিত নৌকার ফুয়েল পানিতে পড়ে পরিবেশ বিপর্যয়, অবৈধ জালের ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে হাওরে মাছ কমে গেছে। ১২ প্রজাতির মাছ মারাত্মকভাবে বিপন্ন, ২৮ প্রজাতির মাছ মোটামুটি বিপন্ন।
স্থানীয়রা জানান, হাওর বেষ্টিত উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কালনি-কুশিয়ারা, ধনু, ঘোড়াউত্রা, নরসুন্দা ও সোইজনী নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এসব অঞ্চলের জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংসের ফলেই দেশি প্রজাতির মাছের অভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া অবৈধ কারেন্ট জাল, ভীম জাল, মশারি জাল, বেড় জাল, কোনা বেড় জাল দিয়ে মাছ শিকার পদ্ধতিও এর জন্য দায়ী।
নিকলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম জানান, হাওরের মাছের সুনাম সারা দেশেই রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে হাওরে দেশি মাছ খুব একটা চোখে পড়ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
জানা যায়, শুধু নিকলীতেই ১৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্লাবন ভূমিসহ ৩৮টি জলমহাল রয়েছে। প্রতি বছর নিকলী উপজেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার মেট্রিক টন। আর নিকলীর হাওরে উৎপাদন হয় ৬ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন দেশী মাছ। অর্ধেকেরও বেশি মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন মৎস্যজীবীরা। এসব জলমহাল থেকে একসময় মিঠাপানির চিংড়িসহ বহু প্রজাতির দেশি মাছ বিদেশে রফতানি হতো। নিকলী উপজেলার হাওরে মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এরমধ্যে ১২ প্রজাতির মাছ মারাত্মকভাবে বিপন্ন, ২৮ প্রজাতির মাছ মোটামুটি বিপন্ন।
২০১২ সালে সরকারকারিভাবে নিকলী হাওরে একটি মৎস্য প্রকল্প চালু হলেও এক বছরের মাথায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি হাওরে কি কি মাছ বিলুপ্তির পথে তার কোনও তালিকাও নেই মৎস্য অধিদফতরের কার্যালয়ে।
পশ্চিম নিকলী মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি গোপাল দাস জানান, দুই যুগে প্রায় শতাধিক দেশি প্রজাতির মাছ হাওর থেকে হারিয়ে গেছে। নামাবিল, সিনং, ভূম মাছ, চেলাপাতা, কাশিখয়ারা, ধারকিনা, লালচান্দা, তিতপুঁটি, নেফটানি, নাপিত কৈ, বাঘা গোতম, নাঙ্গাটালু, গোলা, কাঙলা, মধু, আকস, পান, মাসুল, কোরাল, রানী বা রানদী, হিলুরীন, চেলা, বিলুশৈল, এলং মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
চামটা বন্দরের মাছ ব্যবসায়ী মজিদ মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও বামট বা বাইম, কৈলাশ, কাল বাউশ, চিতল, নানীন, ভাচাঁ, গাওরা, গাগলা, পাবদা, বাগাই, রিডা, পুমা, লাচু, টেকা, লিকো বা কাজলী, বেদা বা মিনিক, কাদলা, খাইক্কা, পাঙাস, মৃগেল, শিং, মাগুর, কৈ, চান্দা, বেলে, টেংরা, বাতাই বা আলনি মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়েছে জেলেদের জালে। কিন্তু বর্তমানে এসব মাছ পাওয়া গেলেও পরিমানে তা খুবই কম।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর মানবসৃষ্ট নানা কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এসব দেশি মাছ। তার সঙ্গে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া এবং মৎস্য অভয়াশ্রম না থাকাতেও কমে যাচ্ছে এ অঞ্চলের দেশি প্রজাতির মাছ। এছাড়া হাওর এলাকার কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার প্রয়োগ, অবৈধ জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে মৎস্য নিধন, কীটনাশকের মাধ্যমে মাছ ধরা ও জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণেই দেশি প্রজাতির মিঠাপানির মাছে আকাল দেখা দিয়েছে।