কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে প্রথমবারের মতো এবার গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ করা হয়েছে। কৃষক মো. হাজিজুল ৫০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগের সহায়তায় তরমুজ চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন কৃষক মো. হাজিজুল। বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য দেখে এতে স্থানীয় অনেক কৃষকই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
তাড়াইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানা যায়, শীতকালে এখানকার আবহাওয়া শীতপ্রধান হওয়ায় উপজেলার কোথাও স্বাভাবিক সময়ে তরমুজ চাষ করেন না কৃষকরা। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে এ অঞ্চলের আবহাওয়া এবং মাটি উপযোগী।
দেশের অন্যান্য জেলায় স্বাভাবিকভাবে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়। কিন্তু, তাড়াইলের তরমুজচাষী মো. হাজিজুল তাঁর জমিতে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বীজ রোপণ করেন। জেলার তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের কলুমা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেকের পুত্র কৃষক মো. হাজিজুল তাঁর বাড়ির পাশেই কলুমা মৌজায় ৫০ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন।
সরজমিনে জেলা তাড়াইলের ধলা ইউনিয়নের কলুমা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মো. হাইজুলের তরমুজ খেতের মাচায় ঝুলছে সিনজেনটা কোম্পানীর বাজারজাতকৃত সুগার কুইন জাতের কালো রঙের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ।
তরমুজ চাষের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তরমুজচাষি মো. হাজিজুল (৪৩) বলেন, ‘আমি প্রতিবছর বেগুন, কাঁচামরিচ, ঢ্যাঁড়সসহ অন্যান্য শাকসবজির আবাদ করি। এই বছর প্রথম ৫০ শতাংশ জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে।
আমার খেতের তরমুজ দেখার জন্য দূরদূরান্তের মানুষ প্রতিদিন আসেন। আমার দেখা-দেখি আশপাশের মানুষ তরমুজ আবাদ করতে চান। খেতের তরমুজগুলো বিক্রি করা শুরু করেছি। তরমুজগুলোর রং ও স্বাদ ভালো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি তরমুজ চাষ করেছেন। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করে ৩ লাখ টাকার বেশি পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
একই গ্রামের কৃষক মো. সামছুল আলম বলেন, ‘আমরা তো বেগুন, কাঁচামরিচ, পটোল, কুমড়া, ধান, পাট এসব আবাদ করি। কিন্তু এইবার হাইজুল তরমুজ চাষ করে আমরা-রে তাক নাগে দিছে। মিষ্টিকুমড়া, পটোল, বেগুন এইগুলোর দাম কম। তরমুজের দাম সব সময় বেশি। এত দিন জানছি, আমরা-র এলাকায় তরমুজ আবাদ হয় না। এখন থেকে আমরাও তরমুজ আবাদ করবো। তাতে লাভ বেশি হইবে।’
কলুমা গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউপি সদস্য কৃষক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘তরমুজ আমরা-র এলাকাত নয়া ফসল। এই মাটিত তরমুজ আবাদের কথা আগে-তো আমরা চিন্তাও করি নাই। হাজিজুলের তরমুজ বাগান দেখার জন্য বিভিন্ন গ্রামের মানুষ আইতেছে। আবাদের নিয়মকানুন জাইন্নে নিতাছে। পরিশ্রম করার পারলে, নয়া ফসল হিসাবে তরমুজ আবাদ করে লাভ করা যাইবো।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কলুমা ব্লকে কৃষক মো. হাজিজুল ৫০ শতাংশ জমিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ করেছেন। এখানে একটি জাতের তরমুজ-ই রয়েছে। সেটি সুগার কুইন। এ জাতের তরমুজের ভেতরের অংশ টক-টকে লাল হবে। হাজিজুলের খেতে ফলন ভালো হয়েছে।
ইতিমধ্যেই মধ্যে ওইসব তরমুজ বাজারজাত করা চলছে। বর্তমানে ওই তরমুজ সর্বনিম্ন ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারীভাবে। ঢাকার এক আড়ৎদার নিজ খরচে ক্ষেত থেকে দুই হাজার কেজি তরমুজ ক্রয় করে নিয়েছে। এ হিসাবে ৫০ শতাংশ জমির তরমুজ বিক্রি করা যাবে তিন লাখ টাকার ওপরে। মো. হাজিজুলের তরমুজ বাগান দেখে আশপাশের কৃষকেরাও তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আশা করছি ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ বাড়বে।’
তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন তরমুজ উচ্চ মূল্যের ফসল। এ অঞ্চলে বেলে দো-আঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। আমরা প্রথমবারের মতো এর চাষ করে সফলতা দেখছি।’
বীজ রোপণের ৮০ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা যায়। জৈব বালাইনাশক ও জৈব সার দিয়ে এর চাষ করা হচ্ছে। এটি যেমনে রসালো, তেমনি সুমিষ্ট।’